Thursday, August 24, 2017

Trek to Vasuki Tal 4900 mtr. (Part -2)


ফিরে এলাম আবার প্রথম সংখ্যার পর দ্বিতীয় সংখ্যা নিয়ে!!

ঘুম ভাঙল তারক দার ডাকে। সুব্রত, চল উঠে পড় চা খেতে যাবো। দেখি, সকাল হয়েছে পাখিরা ও ডাকা শুরু করেছে। হাল্কা ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা ভাব, বেশ মনোরম আবহাওয়া, হাল্কা একটা গরমের জামা গায়ে জড়িয়ে বেরিয়ে পড়লাম দুজনে। একটু হাঁটা হাটি করে চা খেয়ে আবার হোটেলে। এরই মধ্যে ফিরে এসে দেখি আমাদের পোর্টার ভাই-রা এসে পৌঁছেছে হোটেলে। আলাপ হলও একজন লক্ষ্মী ভাই, আর একজন তুলারাম। ওদের সকালের খাওয়ার দিয়ে নিজেরাও খাওয়ার খেয়ে নিয়ে স্নান সেরে তৈরি হয়ে নিলাম, পোর্টার ভাই-রা আগেই চলে গেছে দলের মালপত্র নিয়ে। সাথে আমাদের গাড়ি ঠিক করে রাখার জন্য। গাড়ির আড্ডায় এসে আমাদের নির্ধারিত সীটে বসে পড়লেও আমাদের গাড়ির চালক বন্ধু টির দেখা নেই। কারন জানলাম তার এখনো গাড়ি ভরেনি তাই সে এখন যাবে না। প্রায় ১ ঘণ্টা পর তার গাড়ি ভরতে-ই গাড়ি ছেড়ে দিল। আমরা এখন চলেছি ভাগীরথী নদীকে আমাদের ডান দিকে রেখে। কিছু ক্ষণ চলার পর আবার বাম দিকে।

গাড়ি যত পাহাড়ের উপরের দিকে উঠছে প্রকৃতি দেবী ও নিজের রং ও রূপকে উজাড় করে ধরা দিচ্ছে আমার সামনে। পাহাড়ের সেই রূপ যে দেখেছে তার ডাক উপেক্ষা আর কেউ করতে পারেনি। সে যেই হোক। পোর্টার ভাইয়ে ডাকে ধ্যান ভাঙ্গল, বলল দাদা ইহা সে হি মিট্টি কা তেল উঠানা হ্যা। ড্রাইভার কো রুক-নে কে লিয়ে বোলো। বলা হোল, গাড়ি দাঁড়িয়ে ও গেলো যথা স্থানে।
 সাথে উপরি পাওনা হয়ে গেলো ওনার দোকানেই গরম চায়ের উষ্ণ অভ্যর্থনা। দোকান টি বেস বড় সামনের দিকে অনেক টা খোলা। আমার সদস্যরা দোকানের সামনেই বসে পড়েছে চেয়ার টেবিলে গায়ে রোদ লাগানোর জন্য, আর আমি!! একটু তারকাটা টাইপের, আমার অভ্যাস স্থানীয় মানুষের সাথে আলাপ করা, ওদের সাথে কথা বলা, ওদের কে জানা, আমার বেশ ভালোই লাগে, তাই আমি তখন ঐ দোকানের ভেতরে ঢুকে পড়লাম গরম চায়ের আমেজ নিতে। দোকানের ঐ ধোঁয়া ওঠা গরম চায়ের সাথে ঠাণ্ডা হাওয়া বেশ লাগছিল, আর আশে পাশের মাথা তুলে দেখছি উঁচু পাহাড়ের মাথায় নতুন বরফের আস্তরণ। আর রাস্তা দিয়ে ছোটো ছোটো বাচ্ছা দের স্কুলের পোশাকে খেলতে খেলতে স্কুলে জীবনের দিকে ছুটে চলা দেখছি। আমার সাথীরা দোকান থেকে একটু আগেই একটা ছোটো গ্রাম টাকে দেখতে গেছে, দুঃখিত নাম জানি না, কারন আমি যাই নি। আমি তখন নিজের মানশিক ধাক্কা থেকে উঠার চেষ্টা করেচলেছি, আর ঐ চায়ের দোকানের মালকিনের সাথে গল্প করছি আর তার কাঠের উনুনকে  আমার নিজের সাধ্য মত জ্বালিয়ে রাখার চেস্টা করছি, উনুনে একটু একটু কাঠের জোগান দিয়ে। উনি তখন আলুর পকোড়া ভাজতে ব্যাস্ত। গরম পকোড়া খবরের কাগজের টুকরো তে আমার দিকে বাড়িয়ে দিলেন ও। আমি ও সে গুলোকে উদর পূর্তি করছি, আর কেরসিন তেলের অপেক্ষা করছি। তুলারাম এসে বলল দাদা ৪০০/- রুপিয়া দো। আমি উত্তর দিলাম কিতনা উঠায়া তেল?? উত্তর পেলাম ১০ লিটার। বল্লাম ইয়েতো কাফি হ্যা। লেকিন ঠিকসে দাম শুনা তো?? বলে, হ্যা আপ প্যাসা দিজিয়ে, তাও ৫০০/- নোট দিলাম, কিছু পরেই আমাকে অবাক করে ১০০/- টাকা ফেরত করে দিল, সাথে কেরসিন তেলের মালিক ও হাজির। দেখলাম সেও কিছু বলছে না টাকা নিয়ে। মনে মনে ভাবলাম যাক বাঁচা গেছে। বিগত অভিজ্ঞতা থেকে আমাকে অবাক করলো আমি কোথাও এতো কম দামে কেরসিন তেল পাইনি। অনেক পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরেছি, কোথাও ৮০/- এর নীচে পাইনি। আবার ১০০/- টাকা লিটারে ও কিনেছি। কিন্তু কখনই ৪০/- টাকা লিটারে কিনিনি। ইতি মধ্যে আমার বাকি সদস্যরাও ফিরে এসেছে।
এইবার বিদায় জানানোর পালা। দোকানের মালকিন কে জিজ্ঞাসা করলাম কিত্না হুয়া?? উত্তর টা আমাকে বেস রীতিমত চমকে দিয়েছিল। ক্যায় দাদা!! আপ সে ভি প্যায়সা?? আপ যাইয়ে, ওর সাবধানী সে ওয়াপাস আইয়েগা। আমার কোন জোরই খাটলনা ওনার সামনে। এইটুকু সময়ের মধ্যেই আমাদের অজান্তেই আমাদের মধ্যে একটা এত সুন্দর আত্মীয়তা গড়ে উঠেছে বুঝতে পারিনি। শুধু অবাক হয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে আছি। জানি না আবার কোন দিন দেখা হবে কিনা কিন্তু উনি অবলীলায় আমাকে এক অদ্ভুত আত্মীয়তার বন্ধনে বেঁধে দিলেন। আমি গাড়িতে বসেও ওনার দিকে তাকিয়ে আছি, আর উনি হাঁসিমুখে আমাদের হাত নেড়ে বিদায় জানাচ্ছেন। গাড়ি চলছে গঙ্গোত্রির উদ্দেশে, আর আমি ভাবছি যার সাথে আমি এতো দিন কাটালাম তাকে আমি আজ ও বুঝতে পারলাম না আর এই মহিলা এই কিছু সময়ের মধ্যে আমাকে এতো আপন করে নিলেন। সত্যিই অদ্ভুত আমরা, কাকেও চিনতে কয়েক শত বছর লেগে যায় আর কাকেও চিনতে কিছু মুহূর্তই যথেষ্ট।
গাড়ি চলছে, আর তুলারাম বলে যাচ্ছে কোনটা কি। কোন জায়গার নাম কি ইত্যাদি।
শুধু দেখে যাচ্ছি কিন্তু কিছু মাথায় ঢুকছে না, কারন আমার মাথায় তখন আর কিছু নেই, আছে শুধু ঐ দোকানদার মহিলা, আর তার আপন করে নেওয়া, তার আতিথেয়তা। এরই মধ্যে ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না। গাড়ীর ঝাঁকুনিতে ঘুম টা ভেঙ্গে গেলো। গাড়ির জানালা দিয়ে মাথা বের করে দেখলাম জ্যাম। আর একটু মাথা তুলেতেই দেখতে পেলাম সুদর্শন পর্বতের। যে কোন রক্ত মাংসের মানুষ কে তার রূপ দিয়ে মোহিত করে দেওয়া তার কাছে কিছু না। কি তার রূপ। হটাৎ কে যেন বলল কি দেখছি রে?? শুধু বল্লাম সুদর্শন পিক। মনে হল সবারই জিজ্ঞাস্য হোল কই, কই, কই?? উত্তর দিলাম একদম সামনে সোজা সুজি উপরের দিকে দ্যাখ, ঐ যে, যে বরফে ঢাকা পাহাড় টাকে দেখা যাচ্ছে ওটাই সুদর্শন।
তার গুনমুগ্ধ রূপ নিয়ে আমার সাথে লুকোচুরি খেলতে খেলতে আর পাহাড়ের পাক দণ্ডি বেয়ে পোঁছালাম গঙ্গোত্রীতে বিকেল ৪.০০ টে নাগাদ। ভাগীরথী নদীর তীরে হিন্দু ধর্মালম্বী দের পবিত্রতম তীর্থস্থল। ভারতবর্ষের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের উত্তরকাশী জেলার একটি শহর এই গঙ্গোত্রী। পৌরাণিক মতে রাজা ভগীরথের পূর্ব পুরুষদের পাপ থেকে উদ্ধারের জন্য দেবী গঙ্গা এই গঙ্গোত্রী তে নেমে এসেছিলেন। দেবীর এই ধরা ধামে আশার আগে রাজা ভগীরথ নাকি এইখানেই অনেক দিন তপস্যাও করেছিলেন। চারিদিকে কান ফাটানো কোলাহল, চিৎকার চেঁচামেচি, অগণিত গাড়ির হর্নের আওয়াজ। মনে হচ্ছে যেন গোটা ভারতবর্ষ আজ এক জায়গায়। তাদের নানা ভাষা নানা পরিধান তাদের এক এক জনকে এক একজনের থেকে আলাদা করছে। আর ঐ পরিধানই জানিয়ে দিচ্ছে ওনারা কোথা থেকে এসেছেন। আমাদের গাড়ি দাঁড়িয়ে গেল এক ফটকের সামনে। না পুলিশ আর গাড়ি যেতে দিচ্ছেনা, তাই আমাদের গাড়ি পথের এইখানেই ইতি।
এই জায়গায় আমি এই প্রথম বার, তাই জায়গার চারি দিকে চোখ বোলাতে বোলাতেই গাড়ি থেকে মাল পত্র নামিয়ে ১৪০০/- টাকা গাড়ি ভাড়া মিটিয়ে হাঁটা শুরু করলাম এক চওড়া গলির রাস্তা দিয়ে। তার দুই দিকে অগুনতি পসরা। তাদের রং বেরঙের সামগ্রী সাজিয়ে বসে আছে গ্রাহকের আশায়। বেশ ভালোই লাগছিল দেখতে। বেশ কিছুটা হাঁটার পর গঙ্গোত্রী মন্দিরের ঠিক পিছনে বাম দিকে এক সিঁড়ি দিয়ে উঠেই কালি কমলি ধর্মশালা তেই আজ আমাদের রাত্রি বাস। বিশাল একটা ঘর পেলাম যাতে কিছু কম হলেও অনন্ত পক্ষে ২০ জন অনায়াসে থাকতে পারে। কিন্তু আমরা সাত জনই ঐ ঘরেই ঢুকে পড়লাম ৬০০/- টাকার পরিবর্তে। সমস্ত মাল পত্র রেখে আবার বেরিয়ে পড়লাম একটু জায়গা টা কে একটু ভালো করে দেখে নিতে। কারন তাগিদ যেন আমারই বেশী ছিল। মন বিস্ন কিন্তু জায়গা টা আমার কাছে নতুন। তাই দেখা টা খুব জরুরী। বাকি সময় টা এই দিক সেদিক, এই গলি সেই গলি ঘুরতে ঘুরতেই চলে এলাম গঙ্গার তীরে (ভাগীরথী) বসে রইলাম বেশ কিছু ক্ষণ।
মনে পড়ে গেলো রাজ কাপুর সাহাবের আর রবীন্দ্রর জৈন সাহাবের বিখ্যাত সেই বিখ্যাত সিনেমা "রাম তেরি গঙ্গা ম্যাইলি" সত্যিই আজ গঙ্গা ম্যাইলি হয়েছে, সেটা আশে পাশে চোখ বোলালেই বোঝা যাচ্ছে। আমার বয়স যখন দুই বছর তখনের সিনেমাটা হলেও আমার খুব পছন্দের একটা সিনেমা। কারন, দুই জন বিখ্যাত মানুষ, প্রথম রাজ কাপুর সাহাব ও দ্বিতীয় রবীন্দ্রর জৈন সাহাব যেমন তার ডিরেকশান আর তার অসামান্য সব গান, কতবার দেখেছি সিনেমা টা তার হিসাব নেই। আর সিনেমাটা আমাদের হাওড়া থেকে শুরু হয়ে গঙ্গোত্রী হয়ে আবার শেষ হয় হাওড়া হয়ে গঙ্গাসাগরে এটাও একটা বড় পাওনা। কি জানি কোন পাহাড়ের, কোন কোনায় সুটিং করেছিলেন মনে মনে খুঁজতে লাগলাম। যাক আর কিছু বলছি না। সন্ধ্যায় ৭.৩০ মিনিটে গঙ্গা মায়ের আরতি, যেটা দেখার মতো।
আগে ১০ - ১৫ বার হরিদ্বারের গঙ্গা আরতি দেখেছি, কিন্তু গঙ্গোত্রী তে এই প্রথম বার। বেস ভালোই লাগলো। মনটাও বেস ফুরফুরে হয়ে গেল। এইবার আমাদের পেট মহাশয় ও হাঁকডাক শুরু করেছে। (বিশেষ : এই গঙ্গোত্রী জায়গা টি সম্পূর্ণ রকমের নিরামিষ, এইখানে মাছ, মাংস, ডিম তো দূর অস্ত পিঁয়াজ, রসুন ও পাওয়া যায় না) রাতে রুটি স্যালাড আর ফুলকপি আলুর সবজী, মন্দ লাগলো না। জায়গা টি সম্পূর্ণ নিরামিষ হলেও দাম বেশ চড়া। যাই হোক, ডিনার সেরে চলে এলাম আমাদের ঘরে। এরই মধ্যেই একজন নক দিচ্ছে আমাদের দরজায়, না না, ভুল ভাবছেন, সে আর কেউ না ইনি নিদ্রার দেবী। রাতে বেশ ঠাণ্ডা, তাই লেপ কম্বল নিয়ে ঐ মেঝেতে পাতা গদিতেই শুয়ে পড়লাম। কি জানি কি ভাবছিলাম, আর কখন ঘুমালাম।


বিশেষ 
১.দয়া করে অপেক্ষা করুন পরের সংখ্যার জন্য, খুব তাড়া তাড়িই প্রকাশ করবো।
২.আপনাদের মতামত জানার অপেক্ষায় রইলাম, আশা করি জানাবেন। 
৩.যদি আমার লেখা ভালো লেগে থাকে তো সাবস্ক্রাইব করুন!! উপদেশ দিন, আরও ভালো লেখার ও উৎসাহ যোগান!!  


ধন্যবাদ।


Monday, August 7, 2017

Trek to Vasuki Tal 4900 mtr. (Part -1)

Vasuki Tal, It self it is the Base Camp of the Mt. Satopanth Expedition. (One of the killer Mountain in India)


            প্রথমেই বলে নেওয়া উচিৎ আমি ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গ বাসী, বাঙ্গালি ও বটে। বাঙ্গালি হওয়ার জন্য আমার মাতৃ ভাষা ও বাংলা। তাই এইবার ভাবলাম এই ব্লগ টি বাংলা তেই লিখবো। তো এই ব্লগটি বাংলাতেই লিখছি। আশা করি আপনাদের (পাঠক) দের বাংলা ভাষী দের ভালোই লাগবে। 



বিশেষ : 

১. If you do not understand the Bengali language then please           use the translator.  
২. If you won't or can't then please tell me I'll translate it.
  
      যেহেতু লেখা টি অনেক বড় তাই লিখতেও অনেক সময় লাগছে, তাই দুটি অথবা তিনটি সংখ্যায় প্রকাশ করবো। 



      আমার জীবনের প্রথম ট্রেক। এর আগে যত বার পাহাড়ে গিয়েছি সব গুলোই ছিল পর্বত অভিযান। এই প্রথমবার বেরিয়েছিলাম ট্রেক করতে। সেই ২০০৬ সালে প্রাথমিক শিক্ষা  নিই  পর্বত অভিযানের, তারপর ২০০৭ এ আমার প্রথম অভিযান, কামেট, তারপর, ইন্দ্রাসন, ২০০৯ এ নিয়েছিলাম এডভান্স পর্বত অভিযানের শিক্ষা , তারপর  গিয়েছিলাম চোউখাম্বা, মনিরাং, কুন, রামজাক, নন্দাঘুণ্টি, নুন, ও আরও বিভিন্ন পর্বত অভিযানে, কোথাও হেঁসে ফিরেছি তো আবার কোথাও থেকে কেঁদে ফিরেছি।  


      যাই হোক, আমার এই লেখা তে খুঁজে পাবেন আমার  ব্যাক্তিগত জীবনের কিছু লুকানো না বলা কথা। 



      দিন টা মে মাসের মাঝা মাঝি সময়। 

​    মন টা সবে টুকরো টুকরো হওয়া শুরু হয়েছে, অনেক চেষ্টা করছি সব কিছু ঠিক করার, বার বার কথা বলছি, কিন্তু জোড়ার লাগা তো অনেক দুরের কথা, আরও বেশী বেশী করে ভেঙ্গে যাচ্ছে। কেন, তার কোন উত্তর পাইনি। যেন কোন এক নদীর প্রকাণ্ড পাড় ভেঙ্গে পড়ছে প্রচণ্ড জলের চাপে। আর এক একটা করে গ্রাম ঐ নদীর জলে ভেসে যাচ্ছে। বাঁধ দেওয়ার অপ্রাণ সমস্ত চেষ্টাই বৃথা হয়ে যাচ্ছে। শক্ত বাঁধ কতবার যে তুলছি তার কোন হিসাব নেই। জলের এক একটা ঝটকায় খড় কুটোর মতো করে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে সব কিছু। আমি ও কিছু তেই ঠিক ঠাক ভাবে ভেসে থাকতে পারছি না। ঐ ভেসে যাওয়া খড় কুটো গুলো কে আপ্রাণ চেষ্টা করছি জাপটে ধরে ভেসে থাকার। ভাঙ্গা মন টা নিয়ে কিছু তেই কোন কাজে মন বসাতে পারছি না। কেউ ভালো কথা বল্লেও সহ্য হচ্ছে না। রাতের প্রিয় ঘুম গুলোও কেমন যেন উধাও হয়ে যেতে শুরু করলো। মোটা মুটি প্রায় সবার সাথেই কথা বলাও বন্ধ। খুব দরকার নাহলে কথা ও বলছি না!! সময়ের সাথে সাথে আমি যেন পাগল হয়ে যেতে বসেছি। চোখ বন্ধ করলেই ছবি ভেসে উঠছে সে, কাটানো সময় গুলো মনে পড়ে যাচ্ছে। তার প্রমাণ আমার ভেজা বালিশটাই পারবে দিতে।একটা সময় আমার সমস্ত প্রচেষ্টাই বার্থ হল। মনে হচ্ছিল সব ছেড়ে কোথাও পালাই, যেখানে থাকবো আমি আমার স্মৃতি গুলো। তখন ভাবলাম মন ঠিক করার রাস্তা একটাই। হয় পাহাড় আর না হয় কোন মন্দিরে!! যদি ও কিছু দিন আগে থেকেই ভাবছিলাম অনেক দিন হোল পাহাড়ের কাছে যাইনি। আমার প্রথম ভালোবাসা বা প্রথম ভালো লাগার সাথে দেখা করিনি। আমার সেই ভাবনা কেই কাজে লাগালানোর চেষ্টা করলাম। 
      আমার ভাঙ্গা মন  কে সেলাই করাটা খুব জরুরী হয়ে পড়েছিল। তাই সব কিছু ছেড়ে ছুট লাগালাম পাহাড়ের দিকে। সেই দিন যারা আমার সঙ্গ দিয়েছিল, একমাত্র এরাই জানত আমার সব কিছু, আমার দাদা সৌমেন্দু মাণিক, আর এক বন্ধু স্থানীয় দাদা তারক দা, আমার থেকে বয়েসে অনেক বড় হলেও আমাদের সম্পর্ক বন্ধুত্বের, সঙ্গ দিল আমার আর এক বন্ধু পার্থ, আর এক ভাই সায়ন। এ ছাড়া আর একজন বাঘা। ও না গেলেও আমার সঙ্গ দিয়েছিল অন্য রকম ভাবে। এরা জানত সেই সময় আমার সাথে কি ঘটে চলেছে।      
        আমরা পাঁচ জনের একটা দল হয়ে গেলাম। বন্ধু বাঘার সাহায্যে ট্রেনের টিকিটের ব্যাবস্থা টাও হয়ে গেলো। শুধু বাড়ি থেকে সব কিছু ছেড়ে ছুঁড়ে ফেলে পালানোর পালা। ট্রেনে উঠে বসলাম হাওড়া স্টেশান থেকে ৩০এ মে উপাসনা তে। একটা জানালার ধার ধরে বসে বসে ছুটে চলা পাশের রেলের লাইন দেখতে দেখতেই ৩১ তারিখে পৌঁছলাম হরির-দ্বারে। অর্থাৎ হরিদ্বারে। চলে গেলাম মিশ্র ভবনে। ঘর পেলাম একে বারে এক কোনায় একদম গঙ্গা নদীর তিরে। এই ভবনের নিচ দিয়েই বয়ে চলেছে পবিত্র গঙ্গা নদী।

(প্রকৃত গঙ্গা কিন্তু এই নদী টি নয়, গঙ্গা টি বসে গেছে হরিদ্বার শহরাঞ্ছল থেকে কিছু টা দূরে) কিছু ক্ষণ বসে নিজেদের স্নান ও কিছু কথা বার্তা নিজেদের মধ্যে সেরে বেরলাম বাসের খোঁজে জানলাম পর দিন অর্থাৎ ১লা জুন ভোর ৫.৩০এ বাস হরিদ্বার বাস আড্ডা থেকে। জেনে ফিরে এলাম আবার নিজেদের জায়গায়। রাতের খাওয়ার খেয়ে তাড়া তাড়ি বিছানা নিলাম ঘুমের জন্য। কিন্তু বলে না কপালের নাম গোপাল, আমার এই খানেও সেই একই অবস্থা, কিছু তেই ঘুম আসে না। যত ভাবি ভুলে যাবো সব কিছু, কিন্তু স্মৃতি কখন মধুর কখনো বা অম্ল। বারে বারে চলে আসে তার সেই হাঁসি তে ভরা মুখটা চোখের সামনে। বার বার হাত চলে যায় মুঠো ফোনে, এই দেখার জন্য ফোন করেনি তো? মনে হওয়ার কারন মাত্র কটা দিন আগেও এই সময়  এই দূর যন্ত্রে আমাদের ভবিষ্যতের বিভিন্ন জল্পনা কল্পনা চলতো। আর না শুয়ে থাকতে পেরে দরজা খুলে বারান্দায় চলে এলাম। সাথে দেখে এলাম আমার সব সদস্য গভীর নিদ্রায়!! ঠাণ্ডা হাওয়ার সাথে মন কে শান্ত করার চেষ্টা আর সাথে সিগারেটে টান দিচ্ছি আর মাঝে মধ্যেই নদীর জলে ভেসে যাওয়া বাতির দিকে তাকিয়ে রয়েছি, বোঝার চেষ্টা করছি কি জানি কি বার্তা, আর কার জন্য বার্তা নিয়ে চলেছে। ভাবছি ঐ বাতির মতো আমি যদি ভেসে চলে যেতে পারতাম ঠিকানা বিহীনের উদ্দশ্যে!! ঘন অন্ধকারে ঐ বাতির আলো কিছু একটা বার্তা নিয়ে অশান্ত জলের তোড়ে ভেসে চলেছে আর, নিজেকে না ডোবা থেকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছে। আর ঐ অপরূপ দৃশ্য দেখতে দেখতে কখন ঐ বারান্দায় শুয়ে পড়েছি আর ঘুমিয়ে ও পড়েছি জানি না। ঘুম ভাঙল এক প্রচণ্ড ঠাণ্ডার পরশে। ফিরে বিছানা তে শুতেই আবার ঘুম উধাও হলও। 

     ৪ টে তে সবাই কে  ঘুম থেকে দেকে তুলে দিয়ে নিজে নিজেকে পরিষ্কার করে তৈরি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম ভবন থেকে। বাইরে বেরিয়ে ই দেখি বৃষ্টি। আগের রাতেই অটোর ব্যাবস্থা করেই রাখা ছিল, তাকে ফোন করতেই সে হাজির আমাদের বাস আড্ডায় পোঁছানোর জন্য। ভাড়া ১০০/- টাকা মিটিয়ে, বাসের খোঁজে লেগে গেল আমার সব সাথীরা। আর সবাই জানত আমার মন ভালো নেই তাই আমায় কেউ কাজ করতে দিয়ে চায় না। মাল পত্র নিয়ে বসিয়ে দিল এক জায়গায়। বসে রইলাম। আর বাস আড্ডায় মাল পত্র নিয়ে বসে বসে বহু লোকের আনা গোনা দেখছি, তাদের নানা ভাষা না পরিধান দেখছি!! এখন তো চার ধাম যাত্রা চলছে!! তাই সারা পৃথিবী থেকে হিন্দু ধর্মাল্মবী মানুষ জন এই হরিদ্বারে তাদের বিশেষ পূর্ণা অর্জনের আশায়!! আন্দাজ করি ঘণ্টা ১.৩০ মিনিট বাদে সবাই ফিরল, বলল সুব্রত এইখান থেকে কোন বাস নেই আমাদের গত কাল ভুল ভাল খবর দিয়েছে। আমি কি বলবো বুজলাম না চেষ্টা টাও করলাম না। তাই মাথা নিচু করে বসেই রইলাম। বলল কি করবো এইবার তুমি বলও? দেখছি আমাকেই এইবার কিছু করতে হবে, না-হলে হবেনা, বল্লাম তাহলে আর কি চলে চল হৃষীকেশ, ওখান থেকে অনেক বাস আছে। অটোর ৪০০/- টাকা মিটিয়েই পার্থ আর তারক দা কে পাঠালাম বাসের টিকিটের জন্য। বাসে আমাদের ৫ জনের পাঁচ জনের সিটের ভাড়া ১২০০/- টাকা নির্ধারিত হোল। বাসে উঠে বসেছি চা ও বিস্কুট খেয়ে, সাথে দেখি তারক দা, পার্থ, আর আমার দাদা কিছু খাওয়ার ও কিনে এনে বলল সুব্রত আজ আমাদের এই খাওয়ার ই হবে বাসের খাওয়ার। এইখানে বলে রাখি সবাই আমাকে এই দলের দলনেতা বানিয়েছে, তাই যে যাই করুক আমাকে খবর দিচ্ছে। বলল এই খাওয়ার খেয়ে নেবো বাসে আর তারপর টা নেমে ঠিক করবো। খাওয়ার ছিল কেক, কলা, আপেল, আর পাউরুটি!! হটাৎ একটা সমস্বরে চিৎকার হর হর গঙ্গে। বুজলাম এইবার বাস ছাড়বে। ছাড়ল ও, এখন আমাদের গন্তব্য গাড়োয়াল হিমালয়ের উত্তরকাশী শহর (উচ্চতা প্রায় ৪৪৫০ ফুট) অর্থাৎ উত্তরের কাশী। যতটা পড়াশুনা করে জানতে পারি - কাশী অর্থাৎ আমরা এখন যাকে বেনারস বলেই জানি, ঐ শহরের সাথে নাকি এই শহরেরও অনেক মিল পাওয়া যায় তাই নাকি এই নাম। কি জানি আমি এখনো বেনারস দেখিনি, তাই হয়তো কোন মিলও খুঁজে পাইনি। তবে এইখানেই অবস্থিত ভারত বর্ষের বিখ্যাত পর্বতারোহণ শিক্ষার আধুনিক-তম প্রতিস্থান এই শহর উত্তরকাশীতেই, আমরা যাকে চিনি "নিম" অর্থাৎ "নেহেরু ইন্সটিটিউট অফ মাউন্টেনিয়ারিং"। এছাড়াও এই শহরের উপর দিয়েই বয়ে গেছে ভারতবর্ষের বিখ্যাত নদী যমুনা, ও ভাগীরথী। যাই হোক, বাসে প্রথমেই সিট নিয়ে অসুবিধা হল একটু, (বিশেষ : টিকিট কাটার সময় অবশ্যই টিকিটে বাসের সিট নম্বর লিখিয়ে নেবেন নাহলে বাসে সিট নিয়ে অসুবিধায় পড়তে পারেন) আমার সিট টি এক ভদ্র মহিলাকে দিয়ে দিয়ে রেখেছেন বাস কর্ত্রীপক্ষ। তাই আমার বসার সিট পেলাম একেবারে বাসের শেষের সারিতে। বাস এগিয়ে চললও উত্তরকাশীর উদেশ্যে পাহাড়ের পাক দণ্ডি বেয়ে। ফেলে চলেছি বিভিন্ন পাহাড়ি জনপদ কে। বেশ ভালোই লাগছিল এই পিছিয়ে যাওয়া জনপদ দেখতে। আর পাহাড় মানেই তো রঙের খেলা। তাই পাহাড় তার নিজের রঙে নিজেকে রাঙ্গিয়ে আমার কাছে নিজেকে দেখিয়ে চলেছে। আমি চলেছি প্রকৃতি দেবীর সেই রূপ, রস, গন্ধের স্বাদ নিতে নিতে। আহা কি তার রূপ, কি তার গন্ধ। একটু একটু করে যখন এগিয়ে চলেছি উত্তর কাশীর দিকে হাল্কা ঠাণ্ডার পরশে মন কে রোমাঞ্চিত করছে। ক্ষণিকের বাস যাত্রার বিরাম।একটু চা, আর আলুর পরটা সাথে আচার এক অদ্ভুত খাওয়ার পরিবেশন হোল, নাহ পারলাম না খেতে, আবার সেই অবসন্ন মনে কিছু ভালো লাগলো না। আর সবাই আমাকে খাওয়ানোর জন্য ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। এক এক করে সবাই বোঝায় আর খাওয়ার দরবার করে। কোন রকমে ওদের স্নমান রক্ষায় একটু খেয়ে আবার বাসে।

            বাস যতোই এগোয় ঠাণ্ডার পরশ একটু একটু করে জড়িয়ে ধরে আমাকে। ভাবছিলাম এই সময় তার সানিধ্য পেতাম কতই না ভালো লাগতো। কিন্তু ঐ "যেটা লেখা আছে তার বেশী কেউ কখনো পায়নি"। কি জানি আমার ভাগ্যে কি আছে। ধীরে ধীরে বরফ জড়ানো পাহাড়ের দেখা মিলল। সঙ্গে সঙ্গে মন রমাঞ্চিত হয়ে উঠলো। ঐ আলো আঁধারীর খেলা দেখতে দেখতেই চলেছি। কেউ চিৎকার করে জানতে চাইল সুব্রত পাহাড়ের নাম গুলো কি?? উত্তর দিলাম চিনি না। প্রায় দুপুর ৩টে নাগাদ বাস একটা বাম দিকে মোড় ঘুরে দাঁড়িয়ে গেল। বাসের কন্ডাক্টরের নির্দেশ চলো ভাই আগে-য়ে আপ-কা উত্তর-কাশী। আমাদের মালপত্র নামিয়ে ঠিক বাস আড্ডার উল্টো দিকেই উঠলাম। ঘর দেখেই পছন্দ হোল আর সাথে সাথেই মিটিয়ে দিতে হল ১১৫০/- টাকা আমাদের পাঁচ জনের জন্য। তারক দা, পার্থ, সৌমেন্দু দা, আর সায়নের কড়া নির্দেশ এল সুব্রত  ও সুব্রত দা এইবার সব ছাড়, যেখানে এসেছি সেই জায়গা নিয়ে ভাব, আমাদের প্রোগ্রাম নিয়ে ভাব।আমরা তোর/তোমার উপর সব ছেড়ে দিলাম। তুই/ তুমি আমাদের দল নেতা। তুই/তুমি যা বলবে/বলবি তাই হবে। এইবার যা স্নান সেরে নে, লাঞ্চে যাবো। সবাই স্নান না সারলেও আমি স্নান সেরে লাঞ্চ সারলাম আলুর পরটা, আর চা দিয়ে। পরে চন্দন দা কে ফোন করে কাছে গেলাম আমাদের প্রয়জনীয় প্রশাসনিক কাগজ পত্র তৈরি করানোর জন্য। সাথে পোর্টারের জন্য ও। ১৫০/- টাকা করে দিতে হোল গঙ্গোত্রী ন্যাশানাল পার্কে প্রবেশের অনুমতি প্রথম ৩ দিনের জন্য মাথা পিছু। এর পর যত দিন আরও কাটাবে ঐ পার্কে  তার প্রত্যেক দিন হিসাবে ৫০/- টাকা মাথা পিছু আরও দিতে হবে ফেরার সময় গঙ্গোত্রীর চেক পোস্টে। এ ছাড়াও আরও দিতে হোল তাঁবু লাগানোর জন্য প্রত্যেক দিন হিসাবে ১০০/- টাকা এক একটা তাঁবুর জন্য। (তিন জনের তাঁবুর জন্য ১০০/- টাকা, চার জনের তাঁবুর জন্য ২০০/- টাকা রান্নার তাঁবুর জন্য ২৫০/- টাকা আর টলেট তাঁবুর জন্য ৩০০/- টাকা প্রত্যেক দিন) আর পোর্টারের জন্য প্রত্যেক দিনের ৭০০/- টাকা নির্ধারিত হল। সব মিটিয়ে চন্দন দা কে বল্লাম পোর্টার কে আমাদের হোটেলে পাঠিয়ে দিও একবার, আলাপ টা সেরে রাখতে হবে। দপ্তর থেকে বেরিয়ে আগামী দিনের জন্য কিছু কাঁচা আনাজ বাজার সেরে, রাতের খাওয়ারের টাকা দিয়ে চলে এলাম আমাদের হোটেলে। ফিরে আগামী দিনের জন্য সব জিনিস পত্র গুছিয়ে রাখলাম। আবার বেরতে হোল রাতের খাওয়ারের জন্য। পদে ছিল সদস্যদের দাবি মতো মুরগীর মাংস আর হাতে গড়া রুটি। শেষ করে ফিরলাম হোটেলে। আজও বিছানায় শুয়ে সেই একবার এই দিক আবার ওই দিক করতে লাগলাম। 

(বিশেষ : এইখানেই বলে রাখি মানে এই উত্তরকাশী তে সমস্ত ফোনের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়, তারপর আর পাওয়া যায় না, পাওয়া যায় শুধু মাত্র BSNL আর Airtel কাজ করে গঙ্গোত্রী থেকে আরও কিছু টা পর্যন্ত, আর BSNL প্রায় চিরবাসার কাছা কাছি পর্যন্ত)

বিশেষ
১.দয়া করে অপেক্ষা করুন পরের সংখ্যার জন্য, খুব তাড়া তাড়িই প্রকাশ করবো।
২.আপনাদের মতামত জানার অপেক্ষায় রইলাম, আশা করি জানাবেন। 

ধন্যবাদ।